মাদানি নামের বিতর্কে এবার হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কাছে বিচার চাইলেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘শিশুবক্তা’ নেত্রকোনার মাওলানা রফিকুল ইসলাম। গতকাল ফেইসবুক স্ট্যাটাসে “আমার নামে মাদানি লেখায় কেন উকিল নোটিশ” শিরোনামে বাবুনগরীর প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেন তিনি। কয়েকদিন আগে তার নামে মাদানি লিখা অবৈধ দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন মদিনাপ্রবাসী এক হেফাজত নেতা। বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর এবার মুখ খুললেন তিনি।
.
নেত্র আলাপনের পাঠকদের জন্য এখানে তার পুরো খোলাচিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
.
প্রিয় আমিরে হেফাজত আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ আশাকরি আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনি ভাল আছেন.? আমি অধম রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা-মাদানি আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে”আমি অধমের বয়স যখন ১৩বা ১৪বছর তখন থেকেই ওয়াজের ময়দানে কথা বলা শুরু করি আমার ওয়াজের প্রথম দিকে স্বাভাবিক ভাবেই বয়স কম হওয়ায় মানুষ আমাকে শিশুবক্তা বলে সম্বোধন করত এবং পোস্টারেও লিখত যদিও আমি কখনোই আমাকে শিশুবক্তা বলা বা লিখা পছন্দ করতাম না একাধিক বার এ বিষয়ে মানুষকে বুঝিয়েছি তবুও আল্লাহ প্রদত্ত ভাবে আমার শারীরিক গঠন একটু দেখতে ছোট হওয়ায় অনেকে এখনও সেটাই লিখে!
অনেকে আবার অধিক প্রচারণার জন্য বলত আমরা তোমাকে শিশুবক্তা লিখব প্রয়োজনে হাদিয়া বেশি দিব আমি তখন দুনিয়ালোভী মনোভাব দেখে রাগ করে এদের প্রোগ্রাম বাতিল করতাম অনেকে তখন বলত ছেলেটা বেয়াদব! এহেন পরিস্থিতিতে আমি অনেক মুরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করি এমনকি বারিধারা মাদ্রাসার অনেক ছাত্ররাও জানে আমি নিজের নাম থেকে এই শিশুবক্তা কিভাবে মুছে ফেলা যায় সেটা নিয়ে টেনশন করতাম। মাহফিল কমিটিকে শর্ত দেওয়া শুরু করলাম শিশুবক্তা লিখতে পারবেননা এই শর্তে দাওয়াত নিব!
.
তখন অনেক মাহফিল আয়োজক কমিটি আমাকে বলে হুজুর আপনাকে শিশুবক্তা না দিয়ে শুধু রফিকুল ইসলাম লিখলে বা রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা লিখলে কেউ চিনেনা সবাই প্রশ্ন করে ঐ রফিকুল ইসলাম শিশু বক্তা আসবে নাকি.?আমাদের সবাইকে জবাব দিতে হয় হা ঐ শিশুবক্তা রফিকুল ইসলামই আসবেন! আমি তখন অনেক পেরেশানিতে পরে গেলাম হায়রে তাহলে আমার নামে এই শিশু বক্তা কি সারাজীবনই থাকবে.?তখন এ বিষয়টা আমাকে-যে কি পরিমাণ কষ্ট দিত আপনাকে এখন বলে বুঝানো সম্ভব না
প্রিয় আমিরে হেফাজত .?
আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নামের শেষে এমন কোন একটা লক্বব লাগাবো যেটার মাধ্যমে যে কেউ শিশু বক্তা লিখা ছাড়াও আমাকে একনামে লক্বব শুনলেই চিনতে পারবে,তবে কি নাম লাগানো যায় পরামর্শ
শুরু করলাম অনেকে অনেক নাম বলল কিন্তু
আমার কোনটাই পছন্দ হয়নি অনেকে এই সিরিয়াস বিষয়টা নিয়েও মজা করত!
.
সাল ২০১৮ সেদিন ছিল বারিধারা মাদ্রাসার খতমে বোখারী আমার ফারাগাতের বছর সেদিন আমিও পাগড়ি পাব,আল্লামা কাসেমী রহ স্টেজে বসা আমি নিচে ছাত্রদের সাথে বসে আছি হঠাৎ মাইকে নাম ঘোষণা করা হল এখন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবে সারাদেশে সুন্দর উপস্থাপনায় বক্তব্য দিয়ে শিশুবক্তা হিসেবে প্রসিদ্ধ এ বছর দাওরা হাদিস সমাপনকারী আমাদের একজন ছাত্র মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি!
যিনি মাইকে নামটা ঘোষণা করেছেন তিনি বারিধারা মাদ্রাসার ওস্তাদ মাওলানা মাসউদ সাহেব দাঃ বাঃ এবং যিনি আমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য উনাকে নাম ঘোষণা করতে বলেছেন তিনি আর কেউ নন আমাদের সেরে তাজ আল্লামা কাসেমী রহ,সেদিন থেকেই আমি আমার নামের শেষে মাদানি লিখতে শুরু করি! আমি ভেবেছিলাম সকল ওস্তাদদের সামনে মাসউদ সাহেব হুজুর আমাকে মাদানি বলল এমনকি আল্লামা কাসেমী দাঃ বাঃ(তখন)মঞ্চে বসা অথচ মাদানি বলার পরও উনি কিছুই বলেনি,এমনকি একাধিক প্রোগ্রামে আমি কাসেমী রহ এর সাথে হুজুরের গাড়ি দিয়ে গিয়েছি হুজুর আমার সামনে পোস্টার দেখেছেন আমার পাশে বসে বয়ান শুনেছেন কোনদিন আমার নামে মাদানি লিখতে নিষেধ করেননি,আবার আমাদের মাদ্রাসার নামও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা সাহস পেয়ে গেলাম নিজের নামের শেষে লিখতে শুরু করলাম রফিকুল ইসলাম মাদানি!
.
আলহামদুলিল্লাহ কিছুটা হলেও শিশুবক্তা বলাটা কমে যায় এবং মাদানি নামেই আমি সারাদেশে পরিচিতি পেয়ে যায়! কিছুদিন যেতে না যেতেই সমস্যা একটা শুরু হয়ে যায় কিছু মানুষ আমাকে বলা শুরু করে আমি নাকি জাল মাদানি,তাদের এ কথা বলার দলিল হল মদিনা ইউনিভার্সিটিতে পরলেই একমাত্র মাদানি লিখা সহিহ হবে যদিও মদিনা ইউনিভার্সিটি ওয়ালারা কখনোই কাউকে মাদানি লিখার অনুমোদন দেয়নি!
.
নেত্রকোনার সকল চাকরির খবর একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
.
আরেকটা বিষয় আপনিও ভাল জানেন প্রিয় আমিরে হেফাজত,কারও নামের শেষে লাগানো কোন লক্ববই কোরআন হাদিসের দলিল ভিত্তিক কোনকিছু না
এটা হয়তো কেউ বাবার নিসবতে লিখে কিংবা ওস্তাদের না হয় এলাকার নিসবতে অথবা সে যে মাদ্রাসায় পড়েছে সে মাদ্রাসার নিসবতে,আমিও আমার মাদ্রাসার নিসবতে ও সকল ওস্তাদদের সামনে বলার নিসবতেই এটাকে আর্শীবাদ মনে করে লিখতাম! তারপরও অনেকেই সমালোচনা করে বলে একটা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এবং ফেইসবুক পোস্টে সকলকে জানিয়ে নামের শেষে মাদানি কেটে দেই!
.
কিন্তু খুব দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে নাম কেটে দেওয়া সত্যেও এই একটা নর্মাল বিষয় নিয়ে,মদিনা প্রবাসী আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তিনি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য যার নামও রফিকুল ইসলাম মাদানি! তিনি আমি কেন নামের শেষে মাদানি লিখি এ মর্মে সম্পুর্ন বেআইনি ভাবে আমার নামে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলোর নিউজ করেন,নোটিশ পাঠানোর পূর্বেই!
কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এটা আর তেমনকি.?এটা নিয়ে ত আমি পূর্বেই অনেক কিছু বলেছি লিখেছি নিজের নাম থেকে মাদানি বাদও দিয়েছি,দেশের জাতীয় দৈনিক গুলো আমার বিবৃতি নিতে ফোন করেছে আমি নিষেধ করেছি না আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না। ফেস দ্যা পিপল আমাকে নিয়ে লাইভ করতে চেয়েছিল তাদেরকেও ব্যাস্ততার কথা বলে এড়িয়ে গিয়েছি। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলিনি এবং লিখিনি মুরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করে চুপ ছিলাম!
.
কিন্তু যখন সেই নোটিশ আজ আমার বাড়িতে ডাকঘর থেকে পিওন নিয়ে এসে এলাকাবাসীর সামনে দিয়ে যায় তখন আমি এলাকায় খুব লজ্জিত হই! তারচেয়েও বড় বিষয় আমার আম্মা সে বিষয়ে টেনশন করে যদিও আমি উনাকে বুঝায় আম্মা এটা তেমন কিছু না কিন্তু তিনি সহজ সরল মানুষ বারবার আমাকে বলেন(আবু)তোমার মনে হয় কিছু সমস্যা হবে.? আম্মা বলেন আমার খুব টেনশন হয় মনে হচ্ছে আমি টেনশন করব বলে তুমি আমার কাছ থেকে লুকাইতেছ মনে হচ্ছে তোমার নামে মামলা হয়ছে!
.
নেত্রকোনার সকল ঘটনার ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন
.
এমতাবস্থায় আমি আর চুপ থাকতে পারছি না প্রিয় আমিরে হেফাজত,প্রথমত আমি চাই আমি যদি এ বিষয়ে কোন অন্যায় করে থাকি আপনি সেটার বিচার করবেন আমি সে বিচার মাথা পেতে নিব! তবে আপনার কাছে আকুল আবেদন এই যে,উনি কেন আমাকে এ ব্যাপারে কিছু না জানিয়েও জানিয়েছেন বলে মিথ্যা তোহমদ দিয়ে জাতীয় পত্রিকায় নিউজ করলেন এবং আমার বাড়িতে উকিল নোটিশ পাঠালেন। আমাকে আমার আম্মাকে এলাকাবাসীকে পেরেশানি করলেন.?যেখানে আমি উনাকে চিনিনা জানিনা কোনদিন দেখা বা কথা হয়নি এমনকি ফোনেও কথা হয়নি,তবুও কেন এমন করলেন..?
আমি এ ব্যাপারে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
.
সরাসরি না বলে এটা অনলাইনে কেন লিখলেন, এ প্রসঙ্গে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, আমার জানাতে হবে কেন.?দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে আসা নিউজ তাও হেফাজত ইস্যু আবার লোকটার এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ডের কারণে অনেকেই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে ট্রলও করেছে ভাইরাল একটা বিষয় এটা কে না জানে ভাই? তবুও বিষয়টি আমি নিজেই হেফাজতের একাধিক মুরুব্বিদের জানিয়েছি কিন্তু আমি কোন প্রতিকার এখনও পাইনি। অতএব এখন যখন আমি এলাকায় বিষয়টা নিয়ে লজ্জিত ও আমার আম্মাও টেনশন করছে তখন খোলা চিঠির মাধ্যমে বিষয়টা আপনাদের সকলের সামনে আনতে বাধ্য হলাম।
নেত্রকোনা নেত্রকোণা রফিকুল ইসলাম মাদানি মাদানী শিশুবক্তা উকিল নোটিশ হেফাজত জুনায়েদ বাবুনগরী ওয়াজ মাহফিল মাওলানা নাম বিতর্ক মুরুব্বী গণমাধ্যম বিচার প্রতিকার অনলাইন ফেইসবুক পোস্ট শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানি Child islamic speaker Rafikul islam madani letter Babunagari